শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রেডিয়েন্ট ফিশ এ্যাকুরিয়ামে প্রবেশ মুল্য নিয়ে নাখোশ পর্যটকরা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে রাক্ষুসে মাছ পিরানহা। এর পাশেই ফিডার খাওয়া মাছ। হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে হবে টানেলের ভেতর। টানেলের উপরের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে ‘পিতাম বুড়ি’। মানুষের ঠোঁটের মতো মুখওয়ালা মাছজাতীয় এই প্রাণী খুব সহজেই আকৃষ্ট করবে। এছাড়া আছে ৮৬০ ভোল্ট বৈদ্যুতিক শক তৈরি করা ‘বিদ্যুৎ মাছ’।

সাগর তলের এমন অসংখ্য রহস্য নিয়ে কক্সবাজারের ঝাউতলায় গড়ে উঠেছে ‘রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড’। এটি মূলত একটি ফিশ অ্যাকুরিয়াম। প্রায় একশ কোটি টাকা ব্যয়ে এই অ্যাকুরিয়াম তৈরি করেছে রেডিয়েন্ট গ্রুপ। এখানে রয়েছে প্রায় দেড়শ প্রজাতির মাছ।

কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের একটি অংশ প্রতিদিনই সাগর তলের এ রহস্য দেখতে ছুটে যান ফিশ অ্যাকুরিয়ামে। সেখানে সাগরের বিরল মাছ দেখে মুগ্ধ তারা। অ্যাকুরিয়ামটিতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ৩০০ টাকা গুনতে হয়। এটা নিয়ে কেউ কেউ একটু বেজারও হন।

সম্প্রতি পরিবার নিয়ে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড যাওয়া কুমিল্লার রাহাত নূর বলেন, ‘অ্যাকুরিয়ামটিতে কিছু মাছ আছে যেগুলো আগে কখনো দেখিনি। এগুলো দেখে খুব ভালো লেগেছে। শিশুরা ফিডার খাওয়া মাছের কাছে গিয়ে আনন্দ করেছে। মাছকে ফিডার দিয়েছে তারা। অ্যাকুরিয়ামের পরিবেশও ভালো। আমার হিসেবে প্রবেশমূল্য অনেক বেশি। প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা হলে ঠিক ছিল।’

প্রবেশমূল্য নিয়ে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন রাফিয়া জামান নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, ‘অ্যাকুরিয়ামটিতে খুব বেশি মাছ সংগ্রহে আছে তা বলা যাবে না। কিছু বিরল প্রকৃতির মাছ আছে। যেমন- বিদ্যুৎ মাছ, পিরানহা, পিতাম বুড়ি, হাউস পাতা, তারা মাছ, জেলি ফিশ ও লবস্টার। এগুলো দেখে ভালোই লাগে। কিন্তু প্রবেশ ফি ৩০০ টাকা অনেক বেশি। এ ধরনের অ্যাকুরিয়ামের প্রবেশ ফি ১০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘এই অ্যাকুরিয়ামে মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ দেখা ছাড়া কিছু নেই। আবার কিছু মাছ আছে স্বাদু পানির। যেগুলো আমরা সচরাচর যেকোনো স্থানে দেখতে পারি। সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের মধ্যে অ্যাকুরিয়ামটি ভালোভাবে দেখা সম্ভব। এটা অনেকটা জাদুঘরে কিছু জিনিস সংগ্রহে রাখার মতো।’

এদিকে অ্যাকুরিয়ামটিতে প্রবেশ করেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে রাক্ষুসে পিরানহা মাছ। কালো রঙের দুটি পিরানহা পানিতে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। পানির ভেতরে রয়েছে কিছু জলজ উদ্ভিদ। জলজ উদ্ভিদের মধ্যেই দেখা যায় একটি কঙ্কাল। এর সঙ্গেই রয়েছে ফিশ ঝরনা। যেখানে পাহাড়ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখা যাবে।

এখান থেকে কয়েক কদম এগিয়ে সামনে গেলে চোখে পড়বে ফিডার ফিশ। অ্যাকুরিয়ামে দর্শনার্থীরা পাশে রাখা ফিডার হাতে ধরে এই মাছকে খাওয়াতে পারবেন। এজন্য দিতে হবে ২০ টাকা। একটু সামনে গেলেই দেখা মিলবে স্বাদু পানির সবচেয়ে বড় মাছ ‘মেকং জায়ান্ট ক্যাটফিশ’।

এরপর অ্যাকুরিয়ামের রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে দুই ধারে দেখা মিলবে পাঙ্গাশ, সিলভার অ্যারোনা, ব্ল্যাককার্প, কোরাল, শার্ক, সাকার ফিশ, লবস্টার ও ড্রাগন ফিশসহ নানা রঙের মাছ। এর মধ্যেই দেখে দিতে পারবেন এক খণ্ড সুন্দরবন।

সুন্দরবন থেকে একটু দূরেই একটি ট্যানেল, যা অ্যাকুরিয়ামটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এই ট্যানেলের দুই পাশেই সাঁতরে বেড়াচ্ছে কোরাল, শার্ক, পটকা মাছ, দাতিনা, ব্যাট ফিশ, হাউস পাতাসহ বিভিন্ন মাছ। এর মধ্যে হাউস পাতা খুব সহজেই আপনার নজর কাড়বে। অনেকটা কচুপাতার মতো দেখতে এই মাছের চিকন লম্বা লেজ রয়েছে। যে লেজে আছে বিষাক্ত পদার্থ। কোনো শত্রু আক্রমণ করতে এলে নিজেকে রক্ষার জন্য এই লেজের আশ্রয় নেয় হাউস পাতা।

হাউস পাতা দেখতে দেখতে মাথার উপরে তাকালেই চোখ আটকে যাবে। মনে হবে দানবসদৃশ একটি প্রাণী আপনাকে খাওয়ার জন্য হা করে বসে আছে। চ্যাপ্টা আকৃতির এই প্রাণীটির পেটের একটু উপরেই মুখ। এই মুখ অবিকল মানুষের মুখের মতো দেখতে। এটিই হলো পিতাম বুড়ি মাছ।

ট্যানেল থেকে বের হয়ে একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে স্বাদু পানির কচ্ছপ। তার পাশেই রয়েছে একটি কৃত্রিম ঝরনা। এই ঝরনা দেখতে দেখতেই পৌঁছানো যাবে দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলায় উঠেই চোখে পড়বে হাঙ্গর মাছ। তার পাশেই আছে কাঁকড়া জোন। যেখানে লজ্জাবতী ও মাকড়শা কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া দেখা যাবে।

কাঁকড়া জোন পার হয়ে হাঁটতে থাকলে চোখে পড়বে মাছের ডিম। তার পাশেই তারা মাছ ও লবস্টার। পাশাপাশি বিভিন্ন রঙিন মাছ দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যাবে তৃতীয় তলায়, যেখানে রয়েছে শিশুদের খেলার বিভিন্ন রাইড। এসব রাইডের জন্য ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে।

অ্যাকুরিয়ামটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের সহকারী টেকনিশিয়ান মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ১৫০ প্রজাতির মাছ আছে। আগে অক্টোপাস ছিল, এখন নেই। নিজস্ব ও চুক্তিভিত্তিক কিছু মানুষের মাধ্যমে আমরা এসব মাছ সংগ্রহ করি।’

টিকিটের মূল্য বেশি— দর্শনার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হতে পারে টিকিটের মূল্য একটু বেশি। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে দেখবেন, টিকিটের মূল্য আসলে বেশি নয়। আমাদের সংগ্রহে যেসব মাছ, কাঁকড়া ও কচ্ছপ আছে তা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি। নিয়মিত অ্যাকুরিয়ামের পানি বদলাতে হয়। কর্মীদের বেতন আছে। তাছাড়া আমাদের সংগ্রহে যা আছে, তা অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করেছি।’ সূত্র: জাগো নিউজ।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION